banner
bangla-bar

 

র‍্যাডিকাল পদক্ষেপ না নিলে আমাদের ভবিষ্যৎ যেমন হবে,
তারই ইঙ্গিত কভিড-১৯

মাইকেল ডি ইয়েটসের সাক্ষাৎকার
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারুক চৌধুরী।

করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীর প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের অবস্থা এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় নিয়ে এই সাক্ষাৎকারে আলোচনা করেছেন অধ্যাপক মাইকেল ডি ইয়েটস। কয়েক দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইউনিয়ন কর্মী, মান্থলি রিভিয়ু প্রেসের পরিচালক এবং মান্থলি রিভিয়ু পত্রিকার সাবেক সহযোগী সম্পাদক অধ্যাপক মাইকেল ডি ইয়েটস একাডেমিক ক্ষেত্রে শ্রম অর্থনীতি এবং পুঁজি ও শ্রমের সম্পর্কের ওপর বিশেষজ্ঞ। মূল ইংরেজী সাক্ষাৎকারটি এমআর অনলাইন-এ ১২ এপ্রিল, কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত ইংরেজি সাপ্তাহিক ফ্রন্টিয়ার-এর অনলাইন সংস্করণে ১৮ই এপ্রিল এবং কাউন্টারকারেন্টস-এ ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। মার্চের শেষের দিকে এ সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ফারুক চৌধুরী।

ফারুক চৌধুরী: অনেক দিন ধরেই, আপনি শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সাথে সংগঠক ও শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন; তাদের হয়ে বিভিন্ন আলোচনায় প্রতিনিধিত্বও করেছেন। শ্রমিক এবং শ্রেণীর ওপরে আপনার গুরুত্বপূর্ণ রচনা রয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারীতে থাইল্যাণ্ড, ফিলিপাইন, ভারত, বাংলাদেশ থেকে ইটালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকার দেশে দেশে শ্রমিকরাই সব চেয়ে বেশি দাম দিয়েছেন। কোটি কোটি শ্রমিক ইতিমধ্যেই বেকারত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। আমরা দেখেছি মুম্বাই, দিল্লী, ঢাকা থেকে পশুর পালের মত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের এক অভূতপূর্ব যাত্রা। মুম্বাইয়ের ট্রেনগুলোতে ছিল তাদের ঠাসাঠাসি ভীড় — যেন মানুষ নয়, পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। দিল্লী থেকে শ্রমিকদের হাঁটতে হয়েছে শত শত কিলোমিটার, যাদের মধ্যে ছিল ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত শিশুরাও। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করে, যেগুলোতে করে তারা ফিরে গেছে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে, তাদের বাড়ীতে। তারা পালাচ্ছিল মহামারী থেকে নয়, ক্ষুধা থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থা আপনি ভালমতোই জানেন। মার্চের শেষের দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার ল্যাঙ্কেস্টারে কভিড-১৯ পজিটিভ এক তরুণ চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়। জরুরী সেবা কেন্দ্রে তাকে সেবা দেয়া হয় নি; কারণ তার স্বাস্থ্য বীমা ছিলো না। পুরো সমাজ ব্যবস্থার অবস্থা দাঁড়িয়েছে আচমকা থেমে পড়া একটা বিকল যন্ত্রের মত। পুঁজির প্রথম কাজই যখন শ্রমিক শ্রেণীকে হত্যা করা, এই মহামারী পরিস্থিতিতে শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মাইকেল ইয়েটস:  যুক্তরাষ্ট্র শাসন করছে কয়েকটা দানব, যারা শ্রমিকদের নিয়ে কোনো মাথাই ঘামায় না। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পা-চাটা, চোর সরকারের মতো ক্রিমিনালদের কাছে শ্রমিকদের মৃত্যু কোনো গুরুত্বই বহন করে না। ট্রাম্প বলে বেড়াচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বানানো হয়েছিল যাতে মানুষ কাজে ফিরতে পারে। অন্যভাবে বললে, শোষিত হতে এবং এখনকার পরিস্থিতিতে রোগ ও মৃত্যুর শিকার হতে। তার কোনো কোনো সমর্থক এমনটাও বলেছে যে, আমার মত বুড়োদের মরতে আপত্তি থাকা উচিত নয়, যাতে অর্থনীতি আবার চালু হতে পারে। আমরা জানি, ধনীরা, পুঁজিপতিরা, যারা আমাদের দেশ চালায়, তারা কখনো নিজেদের জীবন উৎসর্গ করবে না। তারা থাকবে সবার থেকে আলাদা হয়ে, নিরাপদে, বিলাসিতার মধ্যে এবং পাবে সব চেয়ে সেরা চিকিৎসা সেবা। অন্য দিকে, শ্রমিকরা পাবে মাত্র ১২০০ ডলার আর কপাল ভালো হলে, বেকারত্বের জন্য সামান্য বাড়তি ক্ষতিপূরণ। আর, বড় বড় কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দ চার ট্রিলিয়ন ডলার। আমরা দেখছি যে স্বাস্থ্যকর্মী, মুদির দোকান কর্মচারী (আমার ছেলেও এমন একজন কর্মচারী, যে সব সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছে), নির্মাণ শ্রমিক এবং এমন আরো অনেকের পর্যাপ্ত বা কোনো সুরক্ষা পোশাক ও যন্ত্রপাতি নেই। এবং, লক্ষ লক্ষ বেকারের যে সামান্য টাকা জমানো ছিলো, সেটাও শীগগিরই শেষ হয়ে যাবে। একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে শ্রমিকরা যদি বিদ্রোহ করে বসে, সেটা সামলাতে নানা লৌহকঠিন আইন করা হচ্ছে এবং সামনেও করা হবে। আর গৃহহীন ও আটককৃত অভিবাসীসহ জেলের কয়েদীদের কথা ত বললামই না — সব চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে এরাই এবং ভাইরাস সংক্রমণে এদেরই মৃত্যু হবে সব চেয়ে বেশি। এসব অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটছে দুনিয়ার সব চেয়ে ধনী দেশে। দরিদ্র দেশগুলোতে যেখানে এমনি সময়েও শত কোটি লোক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাস করে, সেখানে কী ঘটছে আমি কল্পনাও করতে পারি না।

দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শ্রমিক আছেন, যারা ট্রাম্পকে সমর্থন করেন, যারা মনে করেন কভিড-১৯য়ের ঝুঁকি মিথ্যা বা তেমন গুরুতর কিছু নয়, যারা এ সবের জন্য বিদেশীদের এবং অন্য দেশকে দোষারোপ করার আগে দ্বিতীয়বার ভাববেন না।

এই সংকট মোকাবেলায় অনেক ইউনিয়ন এবং শ্রমিক সংগঠন কাজ করছে। কিন্তু, সেটা যথেষ্ট না একেবারেই। অসংখ্য গৃহহীন গরীব মাকে আশ্রয় খুঁজতে হচ্ছে পরিত্যক্ত বাড়ীগুলোতে। খাদ্য ব্যাঙ্কের বা লঙ্গরখানার মত উদ্যোগ সংগঠিত হচ্ছে। এ সবই ভালো। কিন্তু শ্রমিক আন্দোলনে বহু বছরের স্থবিরতা আর ডানপন্থী প্রচারের মাশুল দিতেই হবে।

ফারুক চৌধুরী: পুঁজিবাদের প্রভু মুনাফা। আর সেটার জন্য সব সময়ই চড়া মূল্য দিতে হয় শ্রমিক শ্রেণীকে। নানা রূপে চলে শোষণ — শ্রমিকদের এলাকাগুলোকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলে, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংকুচিত করে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা শিল্প ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলে, সামরিকখাতের বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা অবহেলা করে। বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে পুঁজির মহা-আহরণ প্রক্রিয়ার কাজে মুনাফার দাস বানিয়ে ফেলা হয়েছে। শ্রমিকদের বসবাসের জায়গাগুলো অমানবিক ভোগান্তির আখড়া। ইংল্যাণ্ডের শ্রমিক শ্রেণীর ওপর এঙ্গেলস যেমন লিখেছিলেন, তার থেকে অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হয় নি। দেশে দেশে শ্রমিকরা মহামারীর ফলে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, সেটিকে কীভাবে দেখেন?     

মাইকেল ইয়েটস: আপনি যা বললেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজকের বাস্তবতা সে রকমই। অবাক হতে হয়ে অনেক কিছুতেই। ১৯৭০য়ের দশক থেকে আমাদের জীবনের সমস্ত আঙ্গিকে এবং বিশ্বের সব জায়গায় পুঁজির ক্রমবর্ধমান প্রবেশ ঘটেছে। এই আগ্রাসন থামাতে কার্যকর আন্দোলন কমই হয়েছে। ইউরোপের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক সরকারগুলো পর্যন্ত পুঁজির চাহিদা মোতাবেক অনবরত কৃচ্ছ্বতা সাধনের নব্য উদারবাদী পন্থা অনুসরণের পর্যায়ে নেমেছে। যেমন, যুক্তরাজ্যে এক সময় খুবই চমৎকার জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে সরকারি ব্যয় কর্তনের ফলে এই স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার কার্যকারিতা ক্ষয়ে গেছে ও পরিসর সংকুচিত হয়েছে। বর্তমানে, ওদের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার সার্ভিস) প্রায় এক লক্ষ পদ খালি। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরো খারাপ। সাধারণত, শ্রমিকদের কোনো স্বাস্থ্য বীমা থাকে না, থাকলেও সেটা নগণ্য। ফলে, লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এমন সব স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন যেগুলোর চিকিৎসা করা যায় এবং করা উচিত। খুব বেশি শ্রমিক এখন আর ইউনিয়নে জড়িত নন, ফলে ইউনিয়নের সমঝোতায় প্রাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা তারা পান না। খুবই দরিদ্রদের স্বাস্থ্যের অবস্থা শোচনীয়। ব্যয় কর্তনের ওপর মনোযোগ দিয়ে হাসপাতালগুলো ব্যবসার মতো চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হাসপাতালগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। সরকারি হাসপাতালগুলো মূলত গরীবদের জন্য বরাদ্দ, ফলে সেগুলোর চিকিৎসা কর্মীরা যোগ্য ও আন্তরিক হলেও, প্রয়োজনীয় সরবরাহের প্রকট অভাব। ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতালগুলো চলে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে, সুতরাং সেগুলোতে বাড়তি বেড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের কোনো মজুতই নেই। ফলে, ভেন্টিলেটর, বেড, মাস্ক, ইত্যাদির অভাব। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলো নতুন ভাইরাস মোকাবেলায় ওষুধের ওপর গবেষণাকে লাভজনক বলে মনে করে না। ফলে তারা এরকম গবেষণা করে না। সরকারি বরাদ্দও এ ক্ষেত্রে কম, যেহেতু সরকার বন্দী পুঁজির হাতে, যেটি সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রতিযোগিতা চায় না। যদিও সব সময় না, তবে, প্রায়শই বিজ্ঞানীরা স্রেফ পুঁজির আজ্ঞাবহ বড় কম্পানির কর্মী। চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার জয়ী একজনকে আমরা জানি, যিনি হৃদপিণ্ডের ওপর অসাধারণ গবেষণা করেছেন, নোবেল জয়ের পরে প্রভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং সন্দেহজনক সব পণ্যের প্রচার করে বেড়িয়েছেন। এখন আমরা দেখছি ব্যবসায়ীরা এবং তাদের বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাস থেকে টাকা কামানোর জন্য হুড়োহুড়ি করছে। স্মরণীয় যে, সালক এবং সাবিন, পোলিও ভ্যাকসিনের দুই আবিষ্কারক প্যাটেন্ট করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিলেন, এই প্রত্যয় নিয়ে যে, এই ভ্যাকসিন জনগণের জন্য। আজকে এটি প্রায় অবিশ্বাস্য।

ফারুক চৌধুরী: দেশে দেশে মহামারীর ভয়াবহতার মুখে ফ্যাক্টরীগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকরা অসংগঠিত হয়ে পড়ছেন। ইউনিয়নগুলো আগে কখনো এ রকম পরিস্থিতিতে পড়ে নি। শ্রমিকদের ওপর পুঁজি চাপিয়ে দিচ্ছে বিপুল বোঝার ভার — মৃত্যুর মিছিলে থমকে যাচ্ছে সমাজ, দাবী আদায়ের পরিসর হয়ে পড়েছে সংকুচিত; ব্যধি, মৃত্যু আর ক্ষুধায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মানুষের ভাগ্য। মহামারীর ফলে উদ্ভুত এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব?

মাইকেল ইয়েটস: বাস্তবিকই এটা বেশ কঠিন কাজ। আমার মত যারা, তারা যেটা করতে পারেন সেটা হচ্ছে শ্রমিকদের কাছে তাদের জন্য সহজবোধ্য হয় এমনভাবে যত বেশি পারা যায় তথ্য পৌঁছে দেয়া, শাসক শ্রেণীর মিথ্যাগুলো প্রকাশ করে দেয়া। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ, পুরো অবস্থাটা বুঝতে সহায়ক এমন বিকল্প উদাহরণগুলোকে তুলে ধরা। যেমন, বায়োমেডিকেল খাতে কিউবার বিপুল অগ্রগতির ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা; কিউবায় তৈরি ওষুধ কেন যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় না, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা; সারা পৃথিবী জুড়ে কিউবার ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বীরত্বপূর্ণ সংহতিসূচক ভূমিকার কথা তুলে ধরা; নিজেদের এলাকার জন্য শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসগুলোকে উৎসাহিত করা; অবস্থার উত্তরণ ঘটানোর জন্য, বিশেষ করে স্বাস্থ্যের মত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে গণ ধর্মঘট উৎসাহিত করা।

আমি আশা করি, মহামারীর এই অভিজ্ঞতা শ্রমিকদের চেতনা জাগিয়ে তোলার এক বিশাল ডাক। এই অভিজ্ঞতা তাদের জীবনের জন্য বিরূপ সব অযৌক্তিক, দেহ-মন বিধ্বংসী উপাদান স্পষ্ট করে তুলেছে। যেমন, সরকার যদি ঘোষণা দেয় যে, কাউকে জোর করে বাড়ী ছাড়া করা যাবে না, ক্ষুধা থেকে বাঁচতে অর্থ সহায়তা পাওয়া শ্রমিকদের অধিকার, কারোর কাছ থেকে ভাইরাসের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য টাকা নেয়া যাবে না এবং এ রকম সব নির্দেশ, তা হলে হয়ত শ্রমিকরা ভাবা শুরু করবেন যে, বাসা ভাড়া, অর্থহীন কাজের জন্য দাসত্ব করে যাওয়া, স্বাস্থ্য সেবার অভাব, এসব আদতে নির্বুদ্ধিতা। এবং তারা হয়ত এটাও ভাবা শুরু করবেন যে, এ সব কেন সহ্য করতে হবে? বিশ্বাস করুন, এ সব শেষে শাসক শ্রেণী আরো নিষ্ঠুর চেহারা নেবে। তাদের সাথে আমাদেরই লড়াই করতে হবে এবং জিততে হবে।

ফারুক চৌধুরী: বিশ্বমানবতা এর আগে কখনো এমন অবস্থায় পড়ে নি। শ্রমিকদের ইউনিয়ন এবং রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে কীভাবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায়?

মাইকেল ইয়েটস: আগের প্রশ্নের উত্তরে এ প্রশ্নের উত্তর কিছুটা আছে। আমি এখানে যেটা যোগ করব যে, এই মহামারীর গোড়ায় আছে পুঁজিবাদ। বিশ্বজোড়া কৃষি-বাণিজ্যের বিস্তার, এই রকম কৃষির জন্য (এবং খনিসহ অন্যান্য পুঁজিবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য) ভয়ংকরভাবে বন উজাড় করে দেয়া, দক্ষিণ ও উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোকে এক সাথে গেঁথে ফেলা জটিল বিশ্ব-সরবরাহ ব্যবস্থা এই মহামারী এবং হয়ত এর চেয়েও ভয়াবহ মহামারীর মঞ্চ প্রস্তুত করেছে। জটিল ও বিস্তৃত প্রকৃতি এক সময় এমন সব মহামারীকে থামিয়ে দিত বা ছোট জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখত। এর মানে হচ্ছে, আর বেশি দেরী হওয়ার আগেই পুঁজি যা করছে, সেটাকে থামাতে হবে। অন্য কিছুই আমাদের ভালো স্বাস্থ্য এবং উন্নত জীবন এনে দিতে পারবে না। যে বিভিন্ন মহামারী আমাদের আক্রমণ করছে, সেগুলোকে থামানোর সুযোগ আছে শুধু গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রেরই। কোনো র‍্যাডিক্যাল বা আমূল পরিবর্তনকামী নতুন পথ না নিলে আমরা শেষ হয়ে যাবো। র‍্যাডিক্যাল পদক্ষেপ না নিলে আমাদের ভাগ্য কীরকম হবে তারই ইঙ্গিত আজকের এই কভিড-১৯।

ফারুক চৌধুরী: যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি শ্রমিকদের হতে হচ্ছে, সেটি এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মাইকেল ইয়েটস এক সময় মান্থলি রিভিয়ুর সহযোগী সম্পাদক এবং বর্তমানে মান্থলি রিভিয়ু প্রেসের সম্পাদকীয় পরিচালক| অধ্যাপক ইয়েটস শ্রমিক ইউনিয়ন, শ্রমিকদের অবস্থা এবং শ্রম প্রক্রিয়ার ওপর অনেক বই লিখেছেন।  

ফারুক চৌধুরী লেখালেখি করেন। তার ইংরেজি বইয়ের মধ্যে আছে মাইক্রো ক্রেডিট, মিথ ম্যানুফ্যাকচারড (সম্পা.), দা এজ অফ ক্রাইসিস এবং দা গ্রেট ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস, হোয়াট নেক্সট? ইন্টারভিউজ উইথ জন বেলামি ফস্টার (সম্পা., ২০১২)।

অনুবাদক: ওমর রাদ চৌধুরী, শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।

Jun 4, 2020


Omar Raad Chowdhury omar.raad.chowdhury@gmail.com

Your Comment if any